রাসেল ভাইপার বা চন্দ্রবোড়া সাপ ভারতীয় উপমহাদেশের মধ্যে প্রধান চারটি বিষধর সাপের মধ্যে একটি। সম্প্রিতি রাসেল ভাইপার বা চন্দ্রবোড়া সাপ এর উপদ্রোব বাংলাদেশে বেশি দেখা যাচ্ছে বিধায় সাপটি সম্পর্কে আমাদের জানার আগ্রহ অনেক অংশে বেড়ে গিয়েছে তাই আজকে আপনাদের জানাবো রাসেল ভাইপার বা চন্দ্রবোড়া সাপ সম্পর্কে বিস্তারিত ।
রাসেল ভাইপার বা চন্দ্রবোড়া সাপ এর আকৃতি
রাসেল ভাইপার বা চন্দ্রবোড়া
সাপ একটু মোটাসোটা এবং লেজ ছোট এবং সরু হয়ে থাকে। প্রাপ্ত বয়স্ক একটি সাপের দৈর্ঘ্য
সাধারণত ১ মিটার থেকে ১.৮ মিটার পর্যন্ত হতে পারে। রাসেল ভাইপার পার বা চন্দ্রবোড়া
সাপের মাথা চ্যাপ্টা অনেকটা দেহ থেকে বড় আকারের মনে হয়। এই সাপের লেজ সাধারণত ১৬৬ সে.মি
হতে পারে।
রাসেল ভাইপার বা চন্দ্রবোড়া সাপের বাসস্থান
রাসেল ভাইপার বা চন্দ্রবোড়া
সাপ সাধারণত বাংলাদেশ, ভারত. পাকিস্তান, নেপাল, শ্রীলঙ্কা অঞ্চলে দেখা যেত। তাই এই
সকল দেশের গ্রাম অঞ্চল ভয়ের কারণ হতে পারে। আগে এটি শুধু বাংলদেশের বরিশাল অঞ্চলে দেখা
যেত । বর্তমানে পদ্মা নদীর অববাহিকায় যে সমস্ত অঞ্চল রয়েছে যে সমস্ত অঞ্চলে বেশি দেখা
যায় । অঞ্চল গুলো হল রাজশাহী, ফরিদপুর, রাজবাড়ী,
কষ্টিয়া, মানিকগঞ্জ, চাঁদপুর, নোয়াখালী, ভোলাতে
রাসেল ভাইপার বা চন্দ্রবোড়া সাপ পাওয়া যায়।
রাসেল ভাইপার বা চন্দ্রবোড়া সাপের স্বভাব
রাসেল ভাইপার বা চন্দ্রবোড়া
সাধরণত ঘাস, বন, ঝোপ এবং ফসলের জমিতে বা নিচু জমিতে ঘাস রয়েছে ও শুষ্ক জায়গায় বাস করে।
স্থলভাগের সাপ হলেও এটি দ্রুত পানিতে চলতে পারে। ফলে বর্ষা কালে পানির সাথে মিশে থাকা
কচুরিপানা সঙ্গে বহুদূর ভেসে নিজেকে স্থানাস্নর করতে পারে ।
রাসেল ভাইপার বা চন্দ্রবোড়া
সাপ গুলো সাধারণত নিশাচর প্রকৃতির হয়ে থাকে। তাই এরা ইদুর, ছোট পাখি, টিকটিকি, ব্যাঙ খেয়ে থাকে। বসত
বাড়ীর পাশে এই সকল খাবার বেশি থাকে বিধায়
সাপগুলো লোকালয়ে চলে আসে।
রাসেল ভাইপার বা চন্দ্রবোড়া
সাপ সাধারণত নিজে থেকে কাউকে আক্রমণ করে না
কিন্তু একটি সীমার পর তাকে বিরক্ত করলে তাহলে
সে আক্রমাণাত্নক হয়ে উঠে। পৃথিবীতে প্রতিবছর যে পরিমাণ মানুষ সাপের কামড়ে মারা যায় তার একটি বড় অংশ এই সাপের কামড়ে
মারা যায়। তবে মানুষকে নিজে থেকে তেড়ে এসে কামড় দেয় একটি গুজব মাত্র। রাসেল ভাইপার
বা চন্দ্রবোড়া সাপ সাধারণত এক জায়গায় চুপ করে পড়ে থাকে। মানুষ বা বড় কোন প্রাণী সামলে
এলে কুন্ডলী পাকিয়ে বসে এবং শব্দ করতে থাকে। তারপর ও তাকে বিরক্ত করতে থাকলে তাহলে
খুব দ্রুত গতিতে তেড়ে এসে কামড়ায়। এই সাপের
বিষ দাত অন্যান্য সাপের তুলনায় ছোট হয়ে থাকে। এরা রাতে অথবা দিনে যে কোন সময় কামড়াতে
পারে। এবং কামড়ার পর খুব দ্রুত সেখান থেকে সড়ে যায়।
সাধারণত রাসেল ভাইপার বা চন্দ্রবোড়া সাপ মানুষ এড়িয়ে চলে। কিন্তু লোকালয়ের কাছাকাছি ক্ষেতে অথবা ঘাসের জমিতে অনেক সময় খাবার এর জন্য লোকালয়ে চলে আসে ফলে মানুষের সঙ্গে এর দুর্ঘটনা প্রতিদিন বেড়েই চলেছে । প্রতি বছর বিপুল পরিমাণ মানুষ এই সাপটির কারণেই মারা যায়।
রাসেল ভাইপার বা চন্দ্রবোড়া সাপে কামড়ালে পরবর্তী লক্ষণ
রাসেল ভাইপার বা চন্দ্রবোড়া
সাপের কামড়ানোর পর তাৎক্ষণিক ভাবে ক্ষত স্থানে ব্যাথা শুরু হয় এবং ফুলে যায়। এছাড়া
ও রক্তক্ষরণ হতে পারে। এছাড়া ও রক্তচাপ ও হৃদপিন্ড এর কার্যক্ষমতা কমে যায়। অনেক সময়
বমি ও মুখ ফুলে যেতে পারে। দ্রুত চিকিৎসা না নিলে কিডনিও অকার্যকর হতে পারে। রাসেল
ভাইপার বা চন্দ্রবোড়া সাপের বিষ লোহিত রক্ত কণিকা ধংষ করে ফেলে এবং ফুসফুস ও কিডনির
ক্ষতি করে ফেলতে পার। দ্রুত চিকিৎসা বা অ্যান্টিভেনম প্রয়োগ করলে অনেক আংশে শারীরিক
জটিলতা হার কমানো যায়।
রাসেল ভাইপার বা চন্দ্রবোড়া সাপের অ্যান্টিভেনম ও চিকিৎসা
ভারত, বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা প্রভৃতি দেশে বিষধর সাপের বিষ প্রতিরোধের জন্য যে polyvalent antivenom (ভারতের Haffkine
Institute এ তৈরি) অ্যান্টিভেনম প্রয়োগ করা হয়, এই
দ্বারা রাসেল ভাইপার বা চন্দ্রবোর সাপের প্রতিরোধ করা যায়।
২০১৬ সালে কোস্টারিকার Clodomiro Picado Institute একটি নতুন অ্যান্টিভেনম তৈরি করেছে এবং শ্রীলঙ্কায় তা পরীক্ষামূলকভাবে ব্যবহৃত হয়েছে।